ডাকসু নির্বাচন; বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির মোড় ঘোরানো অধ্যায়!

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ - রাত ৭:১২
 0  6.6k
ডাকসু নির্বাচন; বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির মোড় ঘোরানো অধ্যায়!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়— “জাতির বিবেক” হিসাবে পরিচিত—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু।

২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন, দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা ও ছাত্ররাজনীতির অধঃপতনের পর, শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে সীমাবদ্ধ নয়; বরং দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে যাচ্ছে।

নির্বাচনের বিশেষত্ব:

এই বছরের ডাকসু নির্বাচনকে বিশেষ করে তুলেছে কয়েকটি দিক। দীর্ঘ ব্যবধানের পর নিয়মিত নির্বাচন;পূর্বের অনিয়ম ও স্থবিরতার পর এবার একটি তুলনামূলকভাবে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রজন্ম পরিবর্তনের প্রতিফলন স্বরূপ আজকের শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল যুগে বেড়ে ওঠা, যারা স্বাধীন চিন্তা, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক জবাবদিহিতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ যেখানে পূর্বের তুলনায় ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি, যা ছাত্রসমাজের রাজনৈতিক সচেতনতার প্রতিফলন।

চলমান প্রক্রিয়া:

এটি প্রথম নির্বাচন কার্যক্রম সচল হওয়ার পর (মে ১৯৯০ পরবর্তী) যা সমালোচনা মুক্ত ও অংশগ্রহণমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে; ভোটগ্রহণ ও গণনা একইদিনে অনুষ্ঠিত হবে।প্রার্থী তালিকায় ৪৭১ জন প্রার্থী ২৮টি কেন্দ্রীয় পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ।ভোটার তালিকায় মোট ৩৯,৭৭৫ জন নিবন্ধিত ভোটার রয়েছেন, যার মধ্যে ১৮,৯৫৯ জন নারী এই নির্বাচনের মোর ঘোরানোর ক্ষমতা রাখেন ।

নির্বাচনী ইস্তেহার ও প্রভাবকারী প্রতিশ্রুতি:

ইসলামী ছাত্র শিবির–সমর্থিত “শিক্ষার্থী জোট” এর নারী নিরাপত্তা, খাবার ও চিকিৎসা নিশ্চয়তা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি।

বামমুখী “প্রতিরোধ পরিষদ” (Resistance Council) ১৮-দফা ইস্তেহারে শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণার অগ্রাধিকার, হিংসা ও হল আধিপত্য নির্মূল, নারী-বন্ধু ক্যাম্পাসে রূপান্তর, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত খাবারবাড়ির প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ।

বিএনপি-সমর্থিত (JCD) প্যানেল তাদের শপথে রাজনৈতিক শালীনতা, প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান, গণরুম–গেস্টরুম হীন, জবরদস্তি-হীন নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার অঙ্গিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

মহিলা ভোটারদের গুরুত্ব : 

প্রার্থীরা নারীর নিরাপত্তা, আবাসনের সমস্যা ও “এক বিছানা, এক শিক্ষার্থী” নীতি প্রণয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ডিজিটাল প্রভাব ও অনলাইন প্রচারণার অস্পষ্টতা (“auto-turfing”):

অনলাইনে প্রচারাভিযান ছিল অনেকটাই সংগঠিত ও স্বয়ংক্রিয়;যা প্রকৃত জনমতের সাথে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব:

ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ একটি ন্যূনতম ভয়মুক্ত এবং স্বচ্ছ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে, যা আগামী জাতীয় নির্বাচনেও সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।নারী ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, এবং নারী-বন্ধু প্রতিশ্রুতি, জাতীয় রাজনীতিতে নারী প্রভাব বৃদ্ধি ও নীতি-ভিত্তিক রাজনীতির দিকে মোড় নির্দেশ করে।স্বাধীন ও ভিন্নমত প্রদর্শকদের প্রতি শ্রদ্ধা, মূল দলে রাজনীতির সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করছে।ডিজিটাল প্রচারণা ও তথ্য যুদ্ধ, সরল জনমতের ভিত্তিতে রাজনীতির গঠন ও প্রচারে সতর্কতা প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।যদি নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে এটি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে, যা জাতীয় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও অংশগ্রহণ লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ।

ডাকসুর নির্বাচনী ফলাফল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি বার্তা বহন করে। জনগণ এখন পরিবর্তন ও তরুণ নেতৃত্বের দিকে ঝুঁকছে।ছাত্ররা আর কেবল দলীয় রাজনীতির প্রতীক নয়; তারা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নীতি-ভিত্তিক শিক্ষাঙ্গন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির নতুন রূপরেখার দিকে বাংলাদেশকে নতুনভাবে চিন্তা করার নির্দেশনার কথা বলছে। 

ইতিহাসে স্থান:

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মতোই ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে “প্রজন্মের রূপান্তর” অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে।

দীর্ঘ বিরতির পর সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্মের স্বচ্ছ, ভাবনায় উদার অংশগ্রহণ, নারী ভোটারদের গুরুত্ব, ও জবাবদিহিতা-ভিত্তিক ইস্তেহারগুলো।জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ডাকসু নির্বাচন একটি মাইলফলক, যা নির্বাচন-সংস্কৃতিতে এক নতুন অধ্যায় উন্মোচিত করতে পারে।