বরগুনায় জোটের মাঠে পিছিয়ে যেতে পারে হাতপাখা!

২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ - বিকাল ৫:২৭
 0  4.2k
বরগুনায় জোটের মাঠে পিছিয়ে যেতে পারে হাতপাখা!

মিরাজ খান, বরগুনা: বরগুনায় ভোটের প্রচারে জামায়াত ইসলামের চলছে ভিন্ন কৌশল। ভোটের প্রচারণায় পুরুষ কর্মীর পাশাপাশি মাঠে নেমেছে জামায়াতের নারী বিভাগের কর্মী ও নেত্রীরা।

প্রচারণার এই কৌশলে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, নারী ভোটাররাই প্রধান টার্গেট জামায়াতে ইসলামীর। এই টার্গেটে বহু আগে থেকেই চলছে তাদের কার্যক্রম। ফলে নারীদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে তাদের ভোট। বিপরীতে পিছিয়ে পড়ছে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো। আগামী ১২ ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে এই কৌশলী এগিয়ে নিয়ে যাবে তাদেরকে।

বরগুনা-১ ও ২ আসনে রয়েছে জামায়াতের শক্ত প্রার্থী। বিএনপি যেখানে ভোটের মাঠে করছে মিছিল-সমাবেশ, সেখানে জামায়াতের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছে শহর ও গ্রামের বাজার গুলোতে। বিএনপি'র পথসভার পুরোনো কৌশল বাদ দিয়ে ভিন্ন কৌশলে প্রতিটি গ্রামে এবং শহরের বাজারগুলোতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত ইসলাম। এতে জামায়াতের দিকে ঝুকছে সাধারণ মানুষ। বিএনপি যখন রাজপথে মিছিল-সমাবেশে ব্যস্ত, ঠিক তখন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী। বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের পক্ষে আনতে চলছে প্রাণপণ চেষ্টা। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন জামায়াতের মহিলা বিভাগের কর্মীরা। পুরুষ যখন বাইরের কাজে ব্যস্ত, ঠিক তখন ঘরের নারীদের কাছে যাচ্ছে তারা। ৮/১০টি বাড়ির নারীদের নিয়ে হচ্ছে সভা। এতে উপস্থিত থাকছেন ৪০-৫০ জন করে নারী। অংশগ্রহণকারী কারও না কারও বাসাতেই হচ্ছে এই পথসভা, এতে করে যেমন বাড়ছে ভোট, তেমন জামায়তের দিকেই ঝুকছে সাধারণ নারী ভোটাররা।

বরগুনা -১ (বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী) তিন উপজেলা নিয়ে আসনটিতে- বিএনপি তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জেলা বিএনপির আহবায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লাকে। জামায়াত ইসলাম মনোনীত করেছে তাদের জেলা আমির মাওলানা মহিবুল্লাহ হারুনকে ও ইসলামী আন্দোলন মনোনীত করেছেন তাদের জেলা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা মাহমুদুল হোসাইন অলিউল্লাহ কে। তিন দলের প্রার্থীর মধ্যে ভোটের সমীকরণে দেখা গেছে তলে তলে সবথেকে এগিয়ে রয়েছে জামায়ত ইসলামের প্রার্থী মাওলানা মহিবুল্লাহ হারুন। এর আগেও তিনি আওয়ামী লীগ স্বৈরশাসকের আমলে ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৬ হাজারেরও বেশি ভোটে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। যে কারণে জনগণের সাথে তার একটা সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়াও আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় তার একটি নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। যেটা এই নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখবে। ভোটের সমীক্ষা বলছে, যদি জোটের মাধ্যমে তাকে না দিয়ে ইসলামী আন্দোলনকে দেয়া হয় তাহলে এই আসন জামায়েত ইসলাম হারাতে পারে।

বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী জসিম খানের স্ত্রী সুলতানা বেগম (৪৫)বলেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ-বিএনপি তিন দলেরই সরকার ব্যবস্থা দেখেছি। তাদের শাসনামলও দেখেছি। এইবার আমরা নতুন করে চিন্তা করেছি জামায়েত ইসলামকে নিয়ে। যেহেতু তারা বারবার বলছে, তারা সরকারে আসলে দেশের ভাগ্য ও উন্নয়নের জন্য কাজ করবে, তাই এবার জামায়াতে ইসলামের দাড়িপাল্লা মার্কায় আমরা ভোট দেবো। যারা ইসলামের প্রচারণা করে এবং ইসলাম সম্বন্ধে জানে এবং কোরআন বিষয়ে জানে তারা কখনো এ দেশের ক্ষতি করবে না।এ দেশের মানুষের খারাপ হবে এমন কোন কাজ তারা করবে না।

একই গ্রামের বাসিন্দা কুলসুম বেগম বলেন, এই আসনে দাঁড়িপাল্লা মার্কা না থাকলে আমরা ভোট দিতে যাবেন না। এই আসনে হাতপাখার প্রার্থী থেকে দাঁড়িপাল্লা মার্কার প্রার্থী অনেক মানবিক এবং মানুষের সুখে দুখে পাশে থাকেন। খোঁজ-খবর নেন। কিন্তু হাত পাখার প্রার্থী গত কয়েকবার নির্বাচন করেছে একবারও তার চেহারা আমরা দেখিনি! তাই তাকে নিয়ে আমরা কোন চিন্তা করছি না।

তালতলী উপজেলার কবিরাজ পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছগির হালদারের স্ত্রী মাকসুদা বেগম বলেন, জাতীয় পার্টি দেখেছি। বিএনপি দেখেছি। আওয়ামী লীগের লাগাতার ১৫ বছর দেখেছি। এইবার হুজুর গো একবার দেখতে চাই। এইবার একেবারে চিন্তা এবং চূড়ান্ত করেছি‌। জামায়েত ইসলামের দাড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দেবো। এছাড়া কোন মার্কায় ভোট দিতে কেন্দ্রে যাব না। যদি জামায়াত ইসলামের দাড়িপাল্লা মার্কা থাকে তাহলে ভোটকেন্দ্রে যাব। 

আমতলী পৌরসহরের ৯ নং ওয়ার্ডের হালিমা বেগম বলেন, একবার আমরা জামায়েত ইসলামকে সুযোগ দিতে চাই। দেখি তারা ক্ষমতায় এলে দেশের জন্য, আমাদের গরীব মানুষের জন্য কি করে। হাতপাখা এবং দাড়িপাল্লা সমন্বিত প্রার্থীর কথার বিষয়ে তিনি বলেন ,আমরা জানি জামায়েত ইসলামের দাড়িপাল্লা মার্কা। সে ক্ষেত্রে অন্য কোন মার্কা দিলে সমস্যা হবে। আমরা তো জামায়াতের দাড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দেবে।

জামায়েত ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন জোট হয়ে একক প্রার্থী হলে বিজয় কতটা নিশ্চিত হবে সেই  বিষয়ে বরগুনা জেলা জামায়াত ইসলামের আমির মাওলানা মোঃ মহিবুল্লাহ হারুন বলেন, গত ৫ আগস্ট থেকে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। জামায়েত ইসলামের পক্ষে প্রচারণা করেছি। ৫ আগস্ট এর পর থেকে জামায়েত ইসলামের কোন নেতাকর্মী অন্যায়ের সাথে যুক্ত হয়নি। যে কারণে এদেশের মানুষ জামায়াতে ইসলামকে আগামী নির্বাচনে বেছে নেবেন। আমি প্রত্যেকটা মানুষের কাছে গিয়েছি তাদের কথায় আমি বুঝতে পেরেছি মানুষ জামায়াত ইসলামকে কতটা ভালোবাসে। আমি আওয়ামী লীগ স্বৈরশাসকের আমলে ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের ব্যালট টয়লেটে ফেলে দেয়া, ছিড়ে ফেলা, ডাবল সিল মেরে নষ্ট করার পরেও ৪৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে আমি নির্বাচিত হয়েছি। জনগণ আমাকে চেনে জানেন। আমি ইনশাল্লাহ এই আসনটি দলকে উপহার দিতে পারব এটা শতভাগ নিশ্চিত। তাছাড়া, এখন মানুষ জামায়েত ইসলামকে পছন্দ করে।জামায়াত ইসলামের দাড়িপাল্লা মার্কা পছন্দ করে।সেখানে অন্য মার্কার প্রার্থী দিলে কতটা নিশ্চিত হতে পারে সেটা দলই ভালো জানে।

জামায়েত ও ইসলামী আন্দোলন জোট হলে, ইসলামী আন্দোলন কতটা বিজয়ী হতে পারবে সেই বিষয়ে মাওলানা মাহমুদুল হোসাইন অলিউল্লাহ বলেন, মানুষ ইসলামিক দল বলতে বরগুনায় বোঝেই হাতপাখা। গত তিনবার আমরা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। জনগণ আমাকে চেনে।আমাকে জানে। আমরা তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে ইসলামী ঐক্য জোট হয়েছে। আর এই ইসলামী ঐক্য জোট মানেই হাতপাখা বরগুনা হাতপাখা। তাছাড়া বরিশালের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন (চরমোনাই) সব থেকে এগিয়ে। এখানে জামায়েত ইসলামের তেমন প্রভাব নেই। আমি শতভাগ নিশ্চিত এই আসনটি আমি আমার দলকে উপহার দিতে পারব।