নেতৃত্ব শূন্য বরগুনা বিএনপি, সংকটে দলীয় শৃঙ্খলা!

২০২২ সালের ৮ জুন এক বিজ্ঞপ্তিতে বরগুনা জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লাকে আহ্বায়ক এবং তারিকুজ্জামান টিটুকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
পরের বছরের ৮ জানুয়ারি সদস্য সচিব তারিকুজ্জামান টিটু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তৎকালীন ওই কমিটির বিরুদ্ধে পদ বানিজ্যের অভিযোগ উঠলে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে অপর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে পদবাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তদন্ত শেষে গত ২৬ মার্চ পদবাণিজ্যের সত্যতা উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। পরে ১৭ এপ্রিল বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে।
অভিভাবক শূন্য দলে শৃঙ্খলা না থাকায় কর্মীরা যে যার মত দলীয় কর্মযোগ্য চালাচ্ছেন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেলার বিভিন্ন জায়গায় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার কিছু অভিযোগ ওঠে। জেলা কমিটি না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ কর্মীরা।
বিএনপির নেতারা-কর্মীরা দ্রুত কমিটি গঠনের আহবান জানিয়ে বলেন, আগামী কমিটিতে তরুণদের মূল্যায়নের পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতা এবং কর্মীবান্ধব ব্যক্তিদের দিয়ে বরগুনা জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হোক। তরুনদের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে তরুন নেতৃত্ব দাবী করেন তারা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, বিএনপির মত একটি জনপ্রিয় দলের জেলা পর্যায়ে কমিটি না থাকায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে। এ সুযোগ নিচ্ছে অন্য দলগুলো। সরকার পতনের পরে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিতর্কিত কার্যক্রমের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জেলা কমিটি না থাকায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা হতাশ। জেলা বিএনপি নেতৃত্ব শূন্য অবস্থায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনে ধুম্রজালের সৃষ্টিও হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত কমিটির দাবী করেন নেতা-কর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা জেলা বিএনপির সভাপতি পদপ্রত্যাশী দুজন। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা ও সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মাস্টার। সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীও দুজন। জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুজ্জামান মাহফুজ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন হাসান শাহীন।
পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, জেলা কমিটি না থাকায় আমাদের দলীয় কার্যক্রম করতে সমস্যা হচ্ছে। মাথার উপর বটগাছ না থাকলে, মাথা লুকানোর মত ছায়া খুজে পাওয়া যায় না। তাই গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে দ্রুত জেলা কমিটি হওয়া দরকার।
তালতলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল হক বলেন, জেলা কমিটি না থাকায় দল সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা উপজেলার ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির সাবেক একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির অর্থ কেলেঙ্কারি ও পদ বাণিজ্যেরে সঙ্গে বরগুনার একজন কেন্দ্রীয় নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের সত্যতাও পায় কেন্দ্রীয় বিএনপি। এ ছাড়া বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা মামলা ও গ্রেফতার এড়াতে পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে বলেছিলেন, তারা আর বিএনপির রাজনীতি করবেন না। তিনি আরও বলেন, নতুন জেলা কমিটি গঠনে কেন্দ্রের এসব বিষয় বিবেচনা করা উচিৎ। পাশাপাশি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বরগুনা জেলা বিএনপির কমিটি অবশ্যই দালাল মুক্ত হওয়া উচিৎ এমনটাই প্রত্যাশা তার।
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন হাসান শাহীন বলেন, ১৭ বছর পর বিএনপি মুক্তির 'স্বাদ' পেয়েছে। তাই দলের অতি উৎসাহী কিছু নেতারা বিশৃঙ্খলা করছেন। তবে জেলা কমিটি না থাকার কারণে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী কে.এম সফিকুজ্জামান মাহফুজ বলেন, জেলা কমিটি না থাকায় দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। দলকে গতিশীল করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা কমিটি গঠন করা জরুরি বলে দাবী তার।
জেলা বিএনপির সভাপতি পদপ্রত্যাশী ফজলুল হক মাস্টার বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিতর্কিত ও অসাংগঠনিক কার্যক্রমের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জেলা কমিটি না থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে। যোগ্য নেতৃত্ব বেছে দ্রুত কমিটি করার দাবী তার।
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, কমিটি না থাকার কারণে যাঁরা বিতর্কিত কার্যক্রম করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্র দ্রুত কমিটি ঘোষনা করবেন এমনটাই আশা তার। জেলা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক পাঁচ নেতা পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি, তারা তৎকালীন বরগুনা পুলিশ সুপারের কাছে ভবিষ্যতে রাজনীতি করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়েছেন।
দলের নেতা-কর্মীদের দাবী, শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত জেলা কমিটি ঘোষনা করা। বিতর্কিত কাউকে পদে দেখতে চান না দলীয় নেতা-কর্মীরা।
What's Your Reaction?






